স্বাধীনতার রক্তক্ষরা-অগ্নিঝরা মার্চ

“মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে…।” “বলিদান আর অশ্রুজল” আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে জড়িয়ে আছে অতপ্রত ভাবে।


৫২’র ফেব্রুয়ারীতে যে স্বাধীনতার বীজ রূপিত হয় ৭১’র মার্চে সে স্বাধীনতা সংগ্রাম পূর্ণতা পায়। সেই রক্তক্ষরা-অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ। বাঙালির জীবনে নানা কারণে মার্চ মাস অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস। এ মাসেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের এই মাসে তীব্র আন্দোলনের পরিণতিতে শুরু হয় মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। অগ্নিঝরা মার্চের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল আজকেই এই দিনে।




[caption id="" align="alignright" width="372"]স্বাধীনতার রক্তক্ষরা-অগ্নিঝরা মার্চ মার্চ মাস রক্তক্ষরা-অগ্নিঝরা[/caption]

১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হাজারো মানুষ পল্টন-গুলিস্তানসহ আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্র বিন্দু ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করে দেন। এই আন্দোলনের পথ ধরে আসে আমাদের কাঙ্খিত ২৬শে মার্চ।


১মার্চ মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেখানে গিয়ে প্রথমবারের মতো স্লোগান দেয়, ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কর্মসূচী ঘোষণার দাবি জানায়। বিক্ষোভ-স্লোগানে উত্তাল ঢাকাসহ সারাদেশ। আর কোন আলোচনা নয়, এবার পাক হানাদারদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি ক্রমশ বেগবান হতে থাকে।


উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাইরে চলছে বিক্ষুব্ধ বাঙালীর কঠোর কর্মসূচী দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানে সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেন এবং ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভার ঘোষণা দেন।


৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। মরতে যখন শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি, আরো দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’


১৯৭১-এর ৭ মার্চ সাবেক রেসকোর্স ময়দানে (আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) দেয়া ওই ঐতিহাসিক ভাষণের সময় মুহুর্মুহু গর্জনে উত্তাল ছিলো জনসমুদ্র। লক্ষ কণ্ঠের একই আওয়াজ উচ্চারিত হতে থাকে দেশের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ঢাকাসহ গোটা দেশে পত পত করে উড়ছিল সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের পতাকা। সেই শুরু। এরপর ১ মার্চ পেরিয়ে ২ মার্চ। একে একে পার হয় ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ২৫টি দিন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর আক্রমণ চালায়, শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এই পথ ধরে বাঙালী দামাল ছেলেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনেন একটি স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ।


১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য যে আগুন জ্বলে উঠেছিল সে আগুন যেন ছড়িয়ে পড়ে বাংলার সর্বত্র। এরপর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয়-দফা এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সিঁড়ি বেয়ে একাত্তরের মার্চ বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে নতুন বারতা। ওই বছরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এর আগে ২৫ মার্চ রাত একটার অল্প পরে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রেফতার করে তাঁর বাড়ি থেকে। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানিরা বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে ‘অপারেশেন সার্চলাইট’ নামে বাঙালি নিধনে নামে।


ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে সৈন্যরা নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষককে হত্যা করে। এর পরের ঘটনাপ্রবাহ প্রতিরোধের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানুষ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা যোগ দেয় মহান মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা। অগ্নিঝরা এ মাসেই জাতি এবার পালন করবে মহান স্বাধীনতার ৪৬ বছর।



স্বাধীনতার রক্তক্ষরা-অগ্নিঝরা মার্চ

Comments

Popular posts from this blog

কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে প্রতিবেশীর হক

বাচ্চাদের কেনো ভাতের মাড় খাওয়াবেন জেনে নিন!

রোজায় সুস্থ থাকার প্রয়োজনীয় কিছু টিপস