বঙ্গবন্ধু হলেন বাঙালির সেই আপন ব্যক্তি
বাঙালির ইতিহাসে তিনি শ্রেষ্ঠতম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন বাঙালির সেই আপন ব্যক্তি, যিনি কিনা এই কথাগুলো আমাদের হয়ে প্রকাশ করেছিলেন। আমরা এই প্রজন্ম তাঁকে দেখিনি, শুনেছি আর পড়েছি কিছু কিছু। দুঃখের বিষয় একাধিকবার এই তরুণ প্রজন্মকে দ্বিধাবিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে মিথ্যা ইতিহাস দিয়ে। সময়ের পটপরিবর্তনের সঙ্গে ইতিহাস বইয়ের পাতার ছবি পালটেছে। এর পরেও কিছু সত্য চাপা থাকে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাময়িক অস্থিরতার বাইরে গিয়ে দেখলে তাঁর মতো বিশ্বমানের নেতা পাওয়া আমাদের জন্য ছিল পরম সৌভাগ্যের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া মনে করেন, নেতা অনেকেই হতে পারেন, নেতৃত্বদানের ক্ষমতাও অনেকের থাকতে পারে, কিন্তু এমন নেতা পেয়েছি কজন, যিনি বলবেন, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না! আমি বাংলার মানুষের অধিকার চাই। সেটা শুধু বক্তৃতাই ছিল না, ছিল এক ধরনের অঙ্গীকার।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী অহনা ফিরে গেলেন একাত্তরে, মুখে জয়বাংলা আর হূদয়ে বঙ্গবন্ধু—একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বাঙালির এ দুটিই ছিল মূল অস্ত্র। মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনায় আজ দেশের তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে। নতুন প্রজন্মের এই মহাপুনর্জাগরণে যোগ দিয়েছেন দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাসহ সর্বশ্রেণি-পেশার মানুষ। তারুণ্যের এই মহাউত্থান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে সাহস জুগিয়ে বলছে—ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আজ আমরা মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখর করছি চারপাশ। ঠিক তেমনি একদিন ৭ই মার্চের ভাষণে সারা জাতিকে এক করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ৭ই মার্চের ভাষণ যুগ যুগ ধরে বাঙালি জাতিকে অগ্নস্ফূলিঙ্গের মতো উজ্জীবিত করে রাখবে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নোভা মনে করেন, আজকের তরুণ প্রজন্মের প্রেরণাও একই সূত্রে গাঁথা। কেউ কেউ ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ব্রিটেনের জনগণকে জার্মানির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলের ঐতিহাসিক বেতার ভাষণটির সঙ্গে মিল খুঁজে পান। কিন্তু এটি ছিল লিখিত বক্তৃতা। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণ কোনো লিখিত বক্তৃতা নয়, আত্মোপলব্ধি থেকে তিনি এই জয়গান শুনিয়েছেন। এটা ছিল তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্বপ্ন, সাধনা, সংগ্রাম ও ত্যাগের ফসল। গত ৪৫ বছর ধরেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি আবেগ ধরে রেখেছে, যা সারাবিশ্বেই নজিরবিহীন।
এই সময়ের ছেলেমেয়েদের আলোচনায় স্পষ্ট, বঙ্গবন্ধুর বিশাল নেতৃত্বের সহজাত বৈশিষ্ট্যই ছিল বাঙালি জাতির সঙ্গে তাঁর হূদয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলা। জনগণের প্রতি তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল বলেই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি তাঁর প্রবল দায়বদ্ধতার কথা ফুটে উঠেছে। আজীবন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন বলেই সারাটা জীবন সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই। তবুও মনে হয় আজ যদি তিনি থাকতেন, অনেক কিছুই অন্যরকম হতে পারত। বাঙালির যুদ্ধ, জাতিসত্তা গঠন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পিছনে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সাহসিকতাপূর্ণ অসাধারণ নেতৃত্ব। আজ ২০১৬ সালেও তিনি সমান প্রাসঙ্গিক। তাঁর আদর্শ, কর্ম, প্রতিটি শব্দ, বাক্য আমাদের জন্য উপযুক্ত ও প্রেরণাদায়ক। আজকে দেশে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যে যে বিরোধ তাতেও তাঁর বক্তব্য আমাদের জন্য নির্দেশনাস্বরূপ। আজকে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অবাস্তবায়িত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাব আমরা।ইত্তেফাক
Comments
Post a Comment